পাপিয়াকে স্বৈরাচারের দোসর বললেন জামায়াত নেতা
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২০-০১-২০২৫ ০৬:২৬:৪৪ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২০-০১-২০২৫ ০৬:২৭:০৭ অপরাহ্ন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে স্বৈরাচারের দোসর বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার নিজ সামজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে এই পোস্ট দেন। এতে তিনি বাংলাদেশের অন্যতম গণমাধ্যমের একটি সংবাদের স্ক্রিনশট পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেন ‘স্বৈরাচারের দোসরদের চেহারা একে একে বেরিয়ে আসছে’।
জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুলের পোস্টের কমেন্টে অনেকে বিরুপ মন্তব্য করেছেন। তাদের মধ্যে মাসুদ হাসান নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘স্বৈরাচার দোসরদের বিচারের আওতায় আনা হোক।’
জয়নাল আবেদিন নামে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘এজন্যই পাপিয়া আপা আওয়ামী লীগের সময় কোনো কথা বলেনি, সুবিধা পাইছে।’
গণমাধ্যমটির অনুসন্ধানে পাওয়া প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অনুগত ও তোষামোদকারী’ সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আমলা, সাংবাদিক, শিল্পীদের ৮৩০ প্লট দেন হাসিনা এই শিরোনামে গণমাধ্যমের সেই সংবাদ থেকে জানা যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনীতিবিদ, আমলা, পুলিশ ও পেশাজীবীদের কথিত ‘অসামান্য অবদানের’ নামে এই প্লটগুলো দেওয়া হয়। গত পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে সরকার দলীয় বিভিন্ন মন্ত্রী ও আমলাদের পাশাপাশি বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতারাও এই প্লট সুবিধা পান। এতে এই সংবাদে অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে জাপা ও অন্য দলের সাবেক সংসদ সদস্যদের সঙ্গে বিএনপির দুই নেতা ও নেত্রীর তথ্য উঠে এসেছে। তারা হলেন, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী ওরফে পাপিয়া এবং বিএনপির সাবেক সংসদ আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া।
এছাড়া বর্তমানে এসব এসব প্লটের কাঠাপ্রতি বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি। রাজউকের প্লটের আয়তন ৩, ৫, ৭, সাড়ে ৭ ও ১০ কাঠা। সংরক্ষিত কোটায় প্লট পাওয়া কেউ কেউ তা বিক্রিও করে দিয়েছেন। তাছাড়াও সবচেয়ে বেশি প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন বিগত তিন সংসদের (নবম, দশম ও একাদশ) সাবেক সংসদ সদস্যরা। তাদের সংখ্যা অন্তত ২৫৬। এতে সাবেক অন্তত ২২ মন্ত্রী, ১২ প্রতিমন্ত্রী ও ৩৯ জন সচিব ‘অসামান্য অবদানের’ নামে প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। রাজনীতিবিদ ও আমলাদের বাইরে অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক, ৩০ জন শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী পেয়েছেন প্লট। তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, বিচারপতি, প্রবাসী, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে। তাদের পরিচয় মূলত তারা প্রভাবশালী ও আওয়ামী লীগ সরকারের অনুগত অথবা তোষামোদকারী। কেউ কেউ তদবির করেও প্লট নিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে আমি জানি না। সংবাদটি আমি এখনও দেখিনি। তাই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারছি না।
এ বিষয়ে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ২০০৮-১৪ সালে সংরক্ষিত আসনে এমপি থাকার সময় নির্দিষ্ট নিয়মে ১০ কাঠার একটি প্লট পেয়েছিলাম। পরে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সেই বরাদ্দকৃত প্লটটি বাতিল করা হয়। পরে আইনি লড়াই শেষে আমি আমার প্লটটি ফিরে পাই। তবে সেখানে ১০ কাঠার বদলে সাড়ে ৭ কাঠার প্লট দেয় রাজউক।
তিনি বলেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু নেই। আমি ঢাকা শহরে ৫০টি মামলার আসামি। তাই স্বৈরাচারের দোসর হওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ আশির দশকে ছাত্র আন্দোলন করে বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়েছিলাম। আর গত ১৫ বছর আন্দোলন করে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বৈরাচারের পতন আমরা ঘটিয়েছি। এ ছাড়া নুরুল ইসলাম বুলবুল একটা হত্যাকারী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরীহ ছাত্রদের হত্যা করে, রুম পোড়ানো থেকে শুরু করে হাত-পা কাঁটার বিগত অনেক মামলার আসামি তিনি। তা ছাড়া তারা ধর্ম ব্যবসায়ী, তারা মানুষের ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যেতে চান। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ ভালো করেই জানে জামায়াত ইসলামী কী, কতপ্রকার এবং কাহাকে বলে।
পাপিয়া বলেন, না জেনে, না বুঝে নুরুল ইসলাম বুলবুলের ফেসবুকে স্টাট্যাস দেওয়া ঠিক নয়। আর যদি তার জানার আগ্রহ থাকে তাহলে তাদের জামায়াত ইসলামীর যে আইনজীবীরা আছে তাদেরকে জেনে বুঝে ফেসবুকে স্টাট্যাস দেওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের স্ত্রী। এছাড়া নুরুল ইসলাম বুলবুল একই আসনের জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স